ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল - আলিভ তেলের ফেসপ্যাক

অলিভ ওয়েল বা জলপাইয়ের তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের নিয়মিত যত্নে তেলটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। নানান ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই তেল আমাদের মুখে বয়সের ছাপ দূর করতেও কাজ করে।

শুধু তাই না ত্বকের আদ্রতা থেকে শুরু করে ক্ষতিকারক টিস্যু থেকে রক্ষা করে। আজ আমরা জানবো, ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল তেল ও আলিভ তেলের ফেসপ্যাক এর নিয়মাবলী।

সূচিপত্র:

ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল আদ্রতা রক্ষায়

আমাদের ত্বকে পানির পরিমাণ কমে গেলে ত্বক রুক্ষ হতে শুরু করে। নিয়মিত অলিভ ওয়েল এর ব্যবহার এই ঘাটটির আশঙ্কা দূর করে। প্রচুর ভিটামিন এ ও ই- এর পাশাপাশি এই ভিটামিন ডি ও কে থাকে। যা ত্বকের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশকেও সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়। তাই এটিকে সরাসরি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বা ক্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

আমাদের ত্বকের রুক্ষ সূক্ষ্ম ভাব দূর করতে অলিভ ওয়েল সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে। এজন্য ঠান্ডার মৌসুম বা গরমের সময় অলিভ ওয়েল যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। অলিভ ওয়েল ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দেরও ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ঠিক করতে

ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল ব্যবহারের নিয়মের মধ্যে রয়েছে কনুই বা হাঁটুর ছিলে যাওয়া চামড়া অথবা কোন হালকা আঘাতে অলিভ ওয়েল ব্যবহার বেশ কার্যকরী। পাশাপাশি মুখের ব্রণ রোধেয় ভূমিকা রাখে অলিভ অযেল। এর জন্য দায়ী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিতে বাধা দেই তেলটির বিভিন্ন উপাদান। যার ফলে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ত্বকে বা মুখে আঘাত করতে পারে না।

যা ব্রণ ও বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ থেকে সুরক্ষা দেই। রোজাসিয়া ও সরিয়াসিসের মতো রোগগুলোকেও বেশি বাড়তে দেয় না অলিভ ওয়েল। যা ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ইত্যাদি সকল বিষয় সমাধানের জন্য ব্যবহারিত হয়। ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল তেলের গুরুত্ব অপরিসীম।

মুখের সজিবতায় অলিভ ওয়েল

আমাদের ত্বকের অন্যতম উপাদান কোলাজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে অলিভ ওয়েল। এ ছাড়া এতে থাকা অলীক এসিড ত্বকের নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। মুখের ত্বককে করে তোলে আরো নরম, এনে দেয় মুখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।

এটি ব্যবহারের ফলে যাদের ত্বক বা মুখ ঠাণ্ডাতে বা গরমে ফেটে যায় বা শক্ত হয়ে থাকে তাদের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। কারণ এটি ঠান্ডা বা গরমের মৌসুমে ত্বককে নরম রাখে, ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এজন্য ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল তেলের গুরুত্ব অপরিসীম।

বয়সের ছাপ দূর করতে অলিভ ওয়েল

বয়সের সঙ্গে মুখে শরীরে বয়সের ছাপ পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় দূষিত পরিবেশ, মানসিক চাপ বা অন্য কোন কারণ তাহলে তো কথাই নেই। মানসিক চাপ বা অন্য কোন কারণ বয়সের ছাপ বৃদ্ধি করে। আর এ সমাধানেও আছে অলিভ ওয়েল।

এই তেলে পলিফেনল নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে,যা বয়স্ক হওয়ার জন্য দায়ী ফ্রি রেডিকেল তৈরি হতে দেয় না। পাশাপাশি সূর্যের আলো থেকেও মুখকে সুরক্ষা দেয়। যার ফলে আমাদের ত্বকের বয়স্ক ভাব দূর করে সুন্দর করে তোলে। আরে বয়স্ক ছাপ দূর করতে অলিভ ওয়েলের গুরুত্ব অনেক বেশি।

পরিষ্কার রাখতে ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল

আমাদের ত্বক প্রতিনিয়তই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। অলিভ ওয়েল সেই নিয়মিত কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মুখ থেকে মেকআপ বা সানক্রিম তোলার ক্ষেত্রে তেলটি কাজে দেই। মেকআপ তোলার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে পাওয়া গেলেও, এগুলোতে মুখের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিন্তু অলিভ ওয়েল সরাসরি বা প্যাডে মেখে মুখে লাগালে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকেনা। যা ত্বকে পরিষ্কার রাখতে সহযোগিতা করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে এবং তাতে কোন ক্ষতি বা ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল

তৈলাক্ত ত্বক মানে হাজারটা সমস্যা। সারাদিন নাকের দুই পাশে, কপালে তেলের ভাব থাকে। তার ওপর ব্রণ,ফুসকুড়ির সমস্যা তো আছেই। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে আলাদা করে তেল মাখার দরকার হয় না। তৈলাক্ত ত্বকে ময়লা ও জমে তাড়াতাড়ি। ত্বক চিকিৎসকেরা বলেন তৈলাক্ত ত্বকের রূপ টানের জন্য আদর্শ অলির তেল।

এতে ভরপুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের ভিতরে স্তরের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যোগান দিতে পারে। এটি ত্বকের জেলা ফেরায়, আদ্রতা ধরে রাখে, ত্বকের টানটান হয় থাকে। তবে এর ব্যবহার নিয়ম জানতে হবে।

ত্বকের যত্নে অলিভ ওয়েল তেলের এমন কিছু ফেসপ্যাক ঘরেই তৈরি করা যায়। যা ত্বকের জন্য খুব ভালো। ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর করতে পারে আলিভ তেলের ফেসপ্যাক। যেমনঃ

(১)মধু দিয়ে অলিভ তেলের ফেসপ্যাক

একটি পাত্রে এক চামচ অলিভ তেলের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মাইক্রোওভেনে সেই মিশ্রণটি ১০ সেকেন্ডের জন্য গরম করুন। এতে মধু খুব ভালোভাবে মিশে যাবে অলিভ তেলের সঙ্গে।

এই মিশ্রণটি হাত দিয়েই মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে উষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। নরম তয়লা দিয়ে আলতো করে মুখ মুছবেন। যা আপনার তৈলাক্ত ত্বককে অনেক বেশি সুন্দর করে তুলবে।

(২) আমন্ড- আলিভ তেলের ফেসপ্যাক

আমন্ডে থাকে ভিটামিন ই- যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। অলিভ তেল আর আমন্ডের ফেসপ্যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এই প্যাক বানানোর জন্য দুই চামচ তেল এক চামচ আমন্ডের পাউডার মিশিয়ে নিন। এবার তাতে এক চামচ ব্রাউন সুগার মেশান।

সমস্ত উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগাতে হবে।এটা প্রাকৃতিক হিসেবে কাজ করবে। পাঁচ থেকে দশ মিনিট রেখে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইবার এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ উঠে যাবে। এবং ত্বক হয়ে উঠবে অনেক বেশি সুন্দর।

(৩) আলিভ তেলের ফেসপ্যাক বানাতে লেবুর রস

এক চামচ অলির তেলের সঙ্গে হাফ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। সারা মুখে ভালো করে লাগিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট রেখে উষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে দুই, তিনবার এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারলে ব্রণ ফুসকুড়ি সমস্যা দূর হবে। ত্বকের কালচে দাগ বা ছোপও উঠে যাবে। রোদে পোড়া ত্বককে জেলা ফিরিয়ে দিবে।


  • মুখে গ্লামার আনতে নিয়মিত রাতে মুখ ভালো কোন ব্র্যান্ডের ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর পরিষ্কার ত্বকে অলিভ ওয়েল তেল ভালোভাবে মালিশ করে ঘুমিয়ে পড়ুন।

  • গোসলের পর ভেজা ত্বক অলিভ ওয়েল পুরো ত্বকে মালিশ করুন। এতে তেল সহজে শুষে নিতে পারে ত্বক। সেই সঙ্গে তেল থেকে পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও।

  • ত্বকের মরা কোষ প্রাকৃতিকভাবে দূর করতে কাজ করতে পারে অলিভ ওয়েল। তবে আরো ভালোভাবে কাজ করতে অলিভ ওয়েল এর সঙ্গে লেবু, চিনি, মিশিয়ে ত্বক ঘষুন।

  • চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল, বলি রেখা এমনকি রোদে পোড়া ভাব দূর করতেও কাজে লাগাতে পারেন অলিভ অয়েল। এর জন্য আঙ্গুলের ডগায় অলিভ অয়েল নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে আলতোভাবে মালিশ করুন।
  • ত্বকের গ্লো আনার পাশাপাশি যদি সতেজ ও সুন্দর অনুভূতি চান। তবে অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন গোলাপজল। এতে ত্বকের গ্লো আসার পাশাপাশি মিষ্টি একটা সুগন্ধ আপনার আশপাশ ভরে উঠবে।
বর্তমান সময়ে বাজারে অলিভ ওয়েল তেলের দাম বিভিন্ন রকুম। তবে, বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানীর অলিভ অয়েল তেল পাওয়া যাই।তাই, কোম্পানী ভেদে অলিভ অয়েল তেলের দাম কম বা বেশি হতে পারে। তাই, আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা নিচে কয়েকটি ব্রান্ডের তেলের দাম গুলো বিস্তারিত শেয়ার করা হল।
অলিভ অয়েল তেলের ব্রান্ড                                     বাজার দর
Olitalia Olive oil – 100ml                                     ৳২৬৯ টাকা
Skin’O Olive Oil – 100 ml                                     ৳২২০ টাকা
Clariss Olive Oil – 100 ml                                     ৳২৬০ টাকা
Ashol Extra Virgin Olive Oil – 250 ml                     ৳৪৩০ টাকা
Olive Oils Land Extra Virgin – 250 ml                     ৳৭৫০ টাকা
Land Extra Virgin Olive Oil – 500 ml                     ৳১৩৫০ টাকা
Olio Orolio Extra Virgin Olive Oil – 1L                     ৳১৯৯০ টাকা

পরিশেষেঃ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী। অলিভ অয়েল তেল বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। আলিভ তেলের ফেসপ্যাক অত্যন্ত কার্যকরী বলেও মনে করা হয়। আপনারা যদি নিয়মিত এই নিয়মগুলো ফলো করে আলিভ অয়েল তেল ত্বকের যত্নে ব্যবহার করেন, তাহলে ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url